Thursday, December 15, 2011

Human Rights Commission chief Mizan says Stephen J. Rapp is working like a Mercenary for Jamaat

In this Interview with Barta24.net Human Rights Commission chief Mizan says Stephen J. Rapp and/or the US government is working like a Mercenary for Jamaat e Islami



অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান বাংলাদেশের জাতীয় মানবাধিকার কমিশন-এর বর্তমান চেয়ারম্যান। দেশে চলমান আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ও বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে বিজয়ের চার দশকপূর্তির এই সময়ে দেশে অপহরণ ও গুম হবার ঘটনার উদ্বেগজনক পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে তিনি কথা বলেছেন বার্তা২৪ ডটনেটের সঙ্গে। বুধবার রাজধানীর মগবাজারের জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের কার্যালয়ে ড. মিজানুর রহমানের সাক্ষাৎকার নেন মোহাম্মদ আরজু

বার্তা২৪ ডটনেট: এমন একটা সময়ে বাংলাদেশের বিজয়ের চার দশক পূর্তি হচ্ছে, যখন একাত্তরে এ দেশের মানুষের ওপর মানবাধিকারের ভয়াবহ সব লংঘনের বিচারে গঠিত আন্তর্জাতিক ক্রাইমস ট্রাইব্যুনাল (আইসিটি) কাজ করছে। আর ঠিক এই সময়ে মানবাধিকার কমিশনে আপনি নেতৃত্ব দিচ্ছেন। আইসিটির কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করার জন্য কমিশনের কোনো আয়োজন আছে কি?

ড. মিজানুর রহমান: আমরা মনে করি মানবাধিকার কমিশনের একটি ঐতিহাসিক দায়িত্ব আছে। সেটা হলো, আমাদের জন্মলগ্নেই, জাতি হিসেবে আমাদের সবচেয়ে বড়ো অধিকার- যেটা হলো আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার- সেলফ ডিটারমিনেশন। এটি আন্তর্জাতিক আইনে স্বীকৃত একটি অধিকার। সেই অধিকারটি আদায় করতে গিয়ে যখন আমরা সংগ্রামে লিপ্ত- তখন আমাদের বিরুদ্ধে যারা অপরাধ করেছে, আন্তর্জাতিক আইন এই অপরাধগুলোকে জঘন্যতম অপরাধ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। সেই অপরাধের বিচার হওয়াটা অতীব জরুরি এবং সেই কাজটি শুরু হয়েছে।

যেখানে সবচেয়ে জঘন্যতমভাবে মানবাধিকারের লংঘন ঘটেছে, সেই অপরাধের বিচার না হলে কিন্তু অন্য সব কিছুই মলিন, মানে খুবই ম্লান হয়ে যাবে। এই বিচার না হওয়া থেকেই কিন্তু দায়মুক্তির অপসংস্কৃতি গড়ে ওঠে। কালচার অফ ইমপিউনিটি। এ থেকে মুক্ত হওয়ার তাগিদ থেকে এই বিচার হওয়া জরুরি।

আমি বলবো জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের দায়িত্ব এক্ষেত্রে দ্বিবিধ। একদিকে বিচার হতেই হবে। অন্যদিকে বিচার প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা-নিরপেক্ষতা যাতে কোনোভাবেই ক্ষুন্ন না হয়, সেটা দেখতে হবে।

বার্তা২৪ ডটনেট: যেসব মানুষ বাংলাদেশের ইতিহাসের ভয়াবহতম মানবাধিকার লংঘনের শিকার হয়েছেন- একদিকে তাদের জন্য এক ঐতিহাসিক ন্যায়বিচার করার প্রশ্ন, অন্যদিকে যাদের এ অপরাধে অভিযুক্ত করা হয়েছে- অভিযোগ খণ্ডন করতে তাদের ন্যায়বিচারের জায়গা থেকে সবটুকু সুযোগ দেয়ার ব্যাপার আছে।

ড. মিজানুর রহমান: সেদিক থেকে এটা খুবই স্পর্শকাতর একটি ব্যাপার। নৈতিক বলেন, আইনগত বলেন এটা আমাদের দায়িত্ব যে বিচার হতেই হবে। যেটা আপনি বললেন, চল্লিশ বছর অতিবাহিত হয়ে গেছে। এখন এটা নানা কারণেই নানাভাবে মানুষজনের মধ্যে নানা প্রশ্নের সৃষ্টি করতে পারে। বিচার প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা, বিচার প্রক্রিয়ার নিরপেক্ষতা যেনো কোনোভাবেই ক্ষুন্ন না হয় সেটা দেখতে হবে। এ বিচার প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা নিশ্চিত রাখা আমাদের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। বিতর্কের মধ্যেও আমাদের লক্ষ্য, আসল কাজটা যেনো থেমে না যায়। আবার এমন কোনো কাজ করা যাবে না, বিচারটা এমনভাবে পরিচালনা করা যাবে না, যাতে করে বিচারটা প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে যেতে পারে। এই দুটো জিনিস মাথায় রেখে দুই ক্ষেত্রেই ভূমিকা পালন করার আছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের।

বার্তা২৪ ডটনেট: এ ভূমিকা পালনের জন্য ঠিক কী আয়োজন আছে কমিশনের? আপনারা নিয়মিত কোনো পর্যবেক্ষক পাঠাচ্ছেন ট্রাইব্যুনালে?

ড. মিজানুর রহমান:আমরা নিয়মিত খোঁজখবর রাখছি । কী হচ্ছে, কিভাবে হচ্ছে। দ্বিতীয়ত, প্রসিকিউশনের সদস্যদের সঙ্গে আমরা ব্যক্তিগভাবে যোগাযোগ রাখছি। তারা কাজগুলো কিভাবে করছেন, যেনো সকল ধরণের বিতর্কের ঊর্ধ্বে তারা থাকতে পারেন সেটা নিশ্চিত করা হচ্ছে। যারা অভিযুক্ত তাদের অধিকারগুলো ঠিকমতো দেয়া হচ্ছে কি না, তারা তাদের সুযোগগুলো গ্রহণ করতে পারছে কি না। তৃতীয়ত, যে কাজটি আমার মনে হয়... আপনি জানেন জামায়াত ইসলাম এবং যারা অভিযুক্ত হয়েছে, তাদের বন্ধুবান্ধব আত্মীয়-স্বজন মিলে ইউরোপ এবং আমেরিকাতে মিলিয়নস অব ডলার ফান্ড তৈরি করছে।

বার্তা২৪ ডটনেট: এখানে একটা গুরত্বপূর্ণ মাত্রা আছে। ট্রাইব্যুনাল দুইবারই স্পষ্ট করে বলেছেন যে, এটা একটা দেশীয় আদালত। অভ্যন্তরীণ ট্রাইব্যুনাল। কিন্তু আমরা দেখছি আটক ও অভিযুক্তদের আইনজীবীরা বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সনদের সুবিধা দাবি করছেন। অন্য দেশের আইনজীবীদের নিয়ে আসতে চাইছেন। তাদের একজন আইনজীবী এরমধ্যে ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যানকে ব্যক্তিগতভাবে ইমেইলও করেছেন। তো, সব মিলিয়ে দেখা যাচ্ছে অভিযুক্তরা এই বিচারের ‘আন্তর্জাতিক মানে’র ওপর গুরুত্ব দিচ্ছেন। একটা দেশীয় ট্রাইব্যুনালের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক মান দাবি করাকে আপনি কিভাবে দেখছেন?

ড. মিজানুর রহমান: আন্তর্জাতিক মানের প্রশ্নটি অবান্তর, অযৌক্তিক একটি প্রশ্ন। আন্তর্জাতিক মানের প্রশ্নটি কেনো উত্থাপিত হবে? বিচার হচ্ছে আমার রাষ্ট্রের আদালতে, বিচার হচ্ছে রাষ্ট্রীয় আইন অনুসারে, বিচার হচ্ছে আমার রাষ্ট্রের নাগরিকদেরই।

এখন আপনি চিন্তা করে দেখুন, এই যে এখন আমরা কথা বলছি, আজকে কিন্তু বাংলাদেশের ৬৪টি জেলার সেশন জজ আদালতে- মনে করি একটা করেও যদি ধরি- তাহলে ৬৪টি মামলা চলছে। ফৌজদারি মামলা। ৬৪টি ফৌজদারি মামলার মধ্যে বেশ কিছু মামলায় এমন অপরাধে অভিযুক্ত আছে যাদের মৃত্যুদণ্ড হতে পারে। আমরা কি এই মানুষগুলোকে নিয়ে, কখনো আপনি আমি প্রশ্ন তুলেছি যে, সেখানে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড বজায় থাকছে কি না? তাহলে সেই একইভাবে একটি অপরাধের বিচার হচ্ছে রাষ্ট্রীয় আইন অনুসারে, রাষ্ট্রীয় আদালতে, রাষ্ট্রের নাগরিকদের বিরুদ্ধে- সেখানে আমরা আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের প্রশ্ন তুলছি কেনো?

দেখুন যেখানে যেটি প্রযোজ্য নয়, সেখানে সেটি প্রয়োগ করে অযৌক্তিভাবে হীন উদ্দেশ্যে চাপ সৃষ্টি করার কাজে লিপ্ত আছে প্রশ্নকারীরা।

আন্তর্জাতিক মানদণ্ড কখন দরকার? এটা যদি আন্তর্জাতিক একটা ট্রাইব্যুনাল হতো বা দেশীয় ট্রাইব্যুনাল যদি বিচার করতো বিদেশী নাগরিকদের, তখন কিন্তু আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের প্রশ্ন ওঠে। যে তোমার আদালতে তুমি বিদেশী নাগরিকদের বিচার করছো, সেখানে যে ন্যূনতম মানদণ্ড বজায় রাখা দরকার সেটি তুমি রাখছো কি না। আমারটা তো আন্তর্জাতিক আদালতও নয় এবং এখানে বিদেশী কোনো নাগরিকের বিচার হচ্ছে না। যদি পাকিস্তানি কারও বিচার শুরু করি, তখন যদি কেউ আন্তর্জাতিক মান নিয়ে প্রশ্ন তুলে, সেটাকে তখন যৌক্তিক মনে করবো।

আন্তর্জাতিক মানদণ্ড ছিল কোথায়? মনে করুন নুরেমবার্গে, টোকিওতে, সাবেক যুগোশ্লাভিয়ায়, বসনিয়া-হার্জেগোভিনায়, কম্বোডিয়ায়। কেনো? কারণ ওগুলো ছিলো হয় আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনাল, নয় হাইব্রিড মানে যৌথ ট্রাইব্যুনাল। মানে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক যৌথ উদ্যোগে করা হয়েছিল। সেহেতু স্পষ্টভাবেই আন্তর্জাতিক মানের প্রশ্ন উঠেছে।

বার্তা২৪ ডটনেট: সরকারের অনেক মন্ত্রী তো বলছেন একটা আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনাল।

ড. মিজানুর রহমান: মুশকিলটা হয়েছে কি জানেন- এটা মওদুদ আহমেদও বললেন। উনি একটা প্রেস কনফারেন্সে সেদিন বললেন, এখানে যদি আন্তর্জাতিক মানই থাকবে না, তো ট্রাইব্যুনালটার নাম আন্তর্জাতিক কেনো? উনি বললেন, ট্রাইব্যুনালে অবশ্যই আন্তর্জাতিক আইনে বিচার হতে হবে, আন্তর্জাতিক মানদণ্ড বজায় রেখে। এমনটা অনেকে বলছেন। জ্ঞানপাপী হলে যা হয় আর কি!

বার্তা২৪ ডটনেট: এটা কিন্তু ‘আন্তর্জাতিক অপরাধ’ বিষয়ে একটা ট্রাইব্যুনাল। আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনাল নয়।

ড. মিজানুর রহমান: এক্সাক্টলি। এটা হচ্ছে আন্তর্জাতিক অপরাধের বিচারে গঠিত একটা ট্রাইব্যুনাল। কিন্তু ট্রাইব্যুনালটা আন্তর্জাতিক নয়। কিন্তু ওগুলো বলার মানে হলো সাধারণ মানুষকে বোকা বানানোর চেষ্টা। ট্রাইব্যুনালটা হচ্ছে একটা রাষ্ট্রীয় ট্রাইব্যুনাল। দেশীয় ট্রাইব্যুনাল। এই ট্রাইব্যুনালে বিচার হবে সেই সব অপরাধের যেগুলোকে আন্তর্জাতিক আইন স্বীকৃতি দিয়েছে ‘আন্তর্জাতিক অপরাধ’ হিসেবে। আমাদের আইন যেগুলোকে আন্তর্জাতিক অপরাধ হিসেবে সংজ্ঞায়িত করেছে। তাহলে দেখুন কতভাবে কত ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে এটাকে বিতর্কিত করা হচ্ছে। খুব উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়েই এই ভুল ব্যাখ্যা দেয়া হচ্ছে।

বার্তা২৪ ডটনেট: দেশের বাইরে থেকেও অনেকে কথা বলছেন। আমেরিকার যুদ্ধাপরাধ বিষয়ক দূত- স্টিফেন জে র‌্যাপ, তিনিও কিন্তু আসছেন। বাইরে থেকে কাউকে ট্রাইব্যুনালে আসতে দেয়া কি জরুরি?

ড. মিজানুর রহমান: দেখুন, এই বিচার প্রক্রিয়ায় যারাই অভিযুক্ত হচ্ছেন, তারা কোনো না কোনোভাবে বিশেষ একটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত। আবার আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে তাদের একটা বিচরণ আছে। তারা যেহেতু আর্থিকভাবে যথেষ্ট শক্তিশালী। তারা ইউরোপে আমেরিকায় লবিস্ট নিয়োগ করছে। লবিং বা তদবির করাকে আমরা খারাপভাবে দেখি। কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে তদবির করা একটা আইনগত অধিকার।

বার্তা২৪ ডটনেট: বৈধতা দেয়ার ফলে লবিং বিষয়টা ওখানে প্রাতিষ্ঠানিকতা পেয়েছে।

ড. মিজানুর রহমান: হ্যাঁ। আপনি কিন্তু বৈধভাবেই এখানে টাকা বিনিয়োগ করতে পারবেন। তারা আপনার পক্ষে তদবির করে দেবে। এটা তাদের পেশাগত ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। সেই লবিস্টই নিয়োগ করেছে এরা। লবিস্টরা যখন অর্থগ্রহণ করছে, ফলে তাদের কাজ হচ্ছে এদের স্বার্থ রক্ষা করা। অন্যদিকে চিন্তা করলে এরা মার্সেনারি বা ভাড়াটে সৈন্যের মতো। আমি তোমাকে ভাড়া করেছি, তো দরকার হলে আমার জন্য জীবন দাও। এতো টাকা দিয়েছি যে, তোমার চৌদ্দ পুরুষও বসে খেতে পারবে। তাই তুমি আমার হয়ে যুদ্ধ করবে। এখানেও এমন। আমি তোমাকে ভাড়া করেছি। আমার স্বার্থ রক্ষার জন্য তুমি যাবে, ছুটবে, কথা বলবে, যুক্তি দেখাবে- সেটা যে ধরণেরই যুক্তি হোক না কেনো। তারা এটাই করেছে।

বার্তা২৪ ডটনেট: ট্রাইব্যুনাল-অভিযোগ-আন্তর্জাতিক মানের দাবি-বিতর্ক-লবিং- এই পুরো ব্যাপারটা নজরদারি ও পর্যবেক্ষণ করার কোনো আনুষ্ঠানিক আয়োজন আপনাদের আছে কি?

ড. মিজানুর রহমান: ফরমালি জাতীয় মানবাধিকার কমিশন এমন কিছু করেনি এখনো। আপনি জানেন শলাপরামর্শ করে এই ট্রাইব্যুনালের বিরুদ্ধে এক পক্ষ লেগে গেছে, যেমন করেই হোক এটাকে বিতর্কিত করতে চাচ্ছে তারা। আপনি বলছেন এই বিচার প্রক্রিয়াকে আনুষ্ঠানিকভাবে পর্যবেক্ষণ করা কমিশনের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। আমরাও সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে, আমাদের প্যাসিভ ভূমিকা থেকে অ্যাকটিভ ভূমিকায় আসা বাঞ্চনীয়। জানুয়ারি তৃতীয় বা চতুর্থ সপ্তাহে আমরা একটি সংলাপ করতে চাই। আমাদের দেশে যত বিদেশী দূতাবাস আছে, আন্তর্জাতিক সংস্থা আছে, বিদেশী সংবাদ মাধ্যম আছে, তাদের সবাইকে নিয়ে এই সংলাপ হবে। আন্তর্জাতিক মানদণ্ড, প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা, রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নিয়ে যারা প্রশ্ন তুলছেন তারা ওই সংলাপে এসব প্রশ্ন তুলতে পারেন। সেখানে আমরা প্রসিকিউশন টিমকে, তদন্তকারীদের, সুশীল সমাজকে এবং যে তরুণ প্রজন্ম বিচার চায় তাদের এক করতে চাই। আমাদের ভূমিকা হচ্ছে শুধু সংলাপের আয়োজনটা করে দেয়া, সুযোগ করে দেয়া।

জানুয়ারিতে, ফেব্রুয়ারিতে, মার্চে পরপর এমন তিনটি সংলাপের আয়োজন করতে চাই আমরা। আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলের জন্য করবো ফেব্রুয়ারিতে। আমি মনে করি, মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার শুধু একটি রাষ্ট্রেরই দায়িত্ব নয়, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রত্যেকেরই স্ব স্ব অবস্থান থেকে এর প্রতি দায়িত্ব আছে। অন্য কোনোভাবে না হলেও অন্তত নৈতিক সমর্থন দেয়া।

বার্তা২৪ ডটনেট: অভিযুক্তদের আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক এবং অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলামসহ তারা বলছেন যে, ট্রাইব্যুনাল তাদের কথা শুনছে না। সংলাপে ওনাদের কথা আপনারা কিভাবে শুনবেন?

ড. মিজানুর রহমান: আমার তো মনে হচ্ছে ট্রাইব্যুনাল তাদের কথা বেশি শুনে ফেলছে। এই শুনছে না শুনছে না বলে বলেই তো তাদের কথা বেশি শোনাচ্ছে। বেশি শুনছেন কারণেই তো গোলাম আযমের মতো একজন লোকের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট ৫২টি অভিযোগ উত্থাপিত হবার পরেও ট্রাইব্যুনাল এতটা সময় দিয়েছে যে, ছাব্বিশে ডিসেম্বরে আগে অভিযোগ গঠন করা বা না করার সিদ্ধান্ত নেয়া হবে না। কেনো? কেনো এতো সময় দিতে হবে তাকে? যার সম্পর্কে আমাদের এই দেশের আবাল-বৃদ্ধ-বণিতা সবাই জানে যে সে নেতৃত্ব দিয়েছিল। যাকে সবাই ঘৃণাভরে স্মরণ করে। তার বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট ৫২টি অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছে, তারপরও তাকে এতো বেশি সময় দিতে হবে কেনো? শুধু অভিযুক্তদের আইনজীবীদের কারণে? যে তারা বলেছে আমাদের সময় দেয়া হয় না। তাই?

বার্তা২৪ ডটনেট: এখন আপনারা যে সংলাপগুলো করবেন, সেখানে এই অভিযুক্তদের আইনজীবীদের কথা কিভাবে শুনবেন?

ড. মিজানুর রহমান: তারা আসুক, বলুক যে এগুলো আমাদের অভিযোগ এবং প্রসিকিউশনকে সেগুলোর জবাব দিতে হবে। এতো প্রশ্ন তারা তুলেছে আদালতে, আদালত তাদের এতো সময় দিয়েছে, আমার কাছে মনে হয়েছে এ ট্রাইব্যুনাল যুদ্ধাপরাধবান্ধব হয়ে যাচ্ছে। আসলে তারা ট্রাইব্যুনালকে বিতর্কিত করতে চাচ্ছে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে তারা কিছুটা স্বার্থকও হয়েছে। তারা ট্রাইব্যুনালকে কিছুটা বিব্রতও করতে পেরেছে। যার ফলে ট্রাইব্যুনাল তাদের এতো সময় দিচ্ছেন।

বার্তা২৪ ডটনেট: ট্রাইব্যুনাল ছাড়া আর যে ইসুতে কমিশনকে সম্প্রতি সক্রিয় দেখা যাচ্ছে, সেটা হলো গুম। ২০১০ সালে কমিশনের যে পাচসালা স্ট্রাটেজিক প্লান করা হয়েছিল- সেখানে এবছরের সবচেয়ে ‘জরুরি মানবাধিকার ইসু’র তালিকায় প্রথম ছিল ‘গুম’ প্রতিরোধ। বছর শেষ হতে তো আর মাত্র কদিন বাকি আছে। এই বছরে গুমের বিরুদ্ধে কতটুকু চাপে রাখতে পেরেছিলেন সরকারকে?

ড. মিজানুর রহমান: গুমের মাত্রা তো বাড়লো সম্প্রতি। এর আগে এটা এমন বেশি উদ্বেগের কারণ ছিল না।

বার্তা২৪ ডটনেট: আগে তো কমবেশি কিছু জানা যেতো। পুলিশ মামলা নিতো।

ড. মিজানুর রহমান: হ্যাঁ। আমরা অন্তত জানতে পারতাম। কে তাকে ধরে নিয়ে গেছে। কার আওতায় আছে। কিন্তু এখন কিছুই জানা যাচ্ছে না। হয়তো কিছুদিন পরে তার লাশ পাওয়া যাচ্ছে। একারণেই আমরা উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছি যে, নাগরিকের জান ও মালের নিরাপত্তার দায়িত্ব রাষ্ট্রের। আমি জানি না, এ কথা বলে রাষ্ট্র দায় এড়াতে পারে না। তাকে এই দায়িত্ব নিতে হবে, যাতে এটা না হয়। হলে যাতে যথাযথভাবে তদন্ত ও দায়ীদের শাস্তি হয়। আমি সরকারকে বলেছি, এখানে অন্য কোনো অজুহাত গ্রহণযোগ্য হবে না।

বার্তা২৪ ডটনেট: যখন এই ‘গুম’ হওয়া এখনকার মতো এতো এতো ভয়ানক উদ্বেগের ব্যাপার হয়ে ওঠেনি- সেই একবছরেরও বেশি সময় আগেই আপনারা এটাকে ‘জরুরি মানবাধিকার ইসু’র তালিকার প্রথমে রেখেছিলেন। কেনো?

ড. মিজানুর রহমান: আমরা জানি যে, যখনই আমরা এরকম লংঘনের বিরুদ্ধে সোচ্চার হবো, তখনো এর আশংকা কমে যাবে। তাই আমরা এই লক্ষ্য নির্ধারণ করেছিলাম। তখন প্রচুর ‘ক্রসফায়ার’ হচ্ছিল। আমাদের তো ধারণা ছিল এমন ‘ক্রসফায়ারে’ বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের পরে যা ঘটতে শুরু করে, তা হলো গুম হয়ে যাওয়া। মানুষ গুম হয়ে যায়, বছরের পর বছর কোনো হদিস মেলে না। ভাগ্যগুণে হয়তো কারো লাশ পাওয়া যায়। এটা যে ঘটবে সেটা আমরা আঁচ করতে পেরেছিলাম।

বার্তা২৪ ডটনেট: ভয়ের ব্যাপার হলো, তুলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে আইন প্রয়োগকারী বাহিনীর পরিচয় দিয়ে, এটা কি সরকারের দায়িত্ব বাড়িয়ে দিচ্ছে না?

ড. মিজানুর রহমান: এক্সাক্টলি। এমনকি কোনো নাগরিক যদি অপরাধীও হয়, তারপরও আদালতের সিদ্ধান্ত ছাড়া তাকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া যায় না। রাষ্ট্রের দায়িত্ব হলো সব নাগরিকের জান ও মালের নিরাপত্তা দেয়া। এভাবে যদি নাগরিকরা গুম হয়ে যায়, তবে রাষ্ট্রকে প্রমাণ করতে আইন প্রয়োগকারী বাহিনী তাতে জড়িত নয়। জড়িত অন্য কেউ। সেই অন্য কেউকে খুজে বের করে আইনের আওতায় আনতে হবে।

বার্তা২৪ ডটনেট/এসএফ


source