Thursday, January 19, 2012

An assistant of the defense team of ICT was arrested while making photocpies of documents provided by the tribunal itself

ফটোকপি করার সময় ট্রাইব্যুনালের নামে ফোন করিয়ে আটক

নিজস্ব প্রতিনিধি

যুদ্ধাপরাধ মামলায় অধ্যাপক গোলাম আযমের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা সম্পর্কিত কিছু কাগজপত্র নীলক্ষেতে ফটোকপি করার সময় আসামি পক্ষের আইনজীবীদের গবেষণা দলের একজন সদস্যকে আটক করে নিউমার্কেট থানা পুলিশ। গত মঙ্গলবার এ ঘটনা ঘটে। আজ বুধবার ট্রাইব্যুনালের নির্দেশে নিউমাকের্ট থানার ওসি মোস্তাফিজুর রহমান আটককৃত ব্যক্তি ও জব্দকৃত ডকুমেন্ট নিয়ে হাজির হন আদালতে। আদালতকে তিনি জানান, ট্রাইব্যুনাল থেকে তাদেরকে বলা হয়েছে নীলক্ষেতে যুদ্ধাপরাধ বিষয়ক কাগজপত্র ফটোকপি করা হচ্ছে। এগুলো প্রসিকিউশনের ডকুমেন্ট। এগুলো ওখানে গেল কী করে। ওগুলো আপনারা আটকান। তখন আমরা এ পদক্ষেপ নেই।
আজ সকাল সাড়ে দশটার দিকে ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম শুরু হলে আসামি পক্ষের আইনজীবী তাজুল ইসলাম আদালতকে বলেন, গভীর দুঃখের সাথে আজ আদালতকে একটি বিষয় জানাতে হচ্ছে। অধ্যাপক গোলাম আযমের বিষয়ে ট্রাইব্যুনালের নির্দেশে যেসব ডকুমেন্ট প্রসিকিউশন আমাদের দিয়েছিল তার কিছু কাগজপত্র আমরা নীলক্ষেতে ফটোকপির জন্য পঠিয়েছিলাম আমাদের রিসার্চ টিমের একজন সদস্যকে। কিন্তু গত মঙ্গলবার ফটোকপি করার সময় সমস্ত ডকুমেন্টসহ ওই সদস্যকে আটক করে নিয়ে যায় নিউমার্কেট থানা পুলিশ।
তাজুল ইসলাম বলেন, আমাদের ওই সদস্যকে আটকের পর তার মোবাইল ফোন সিজ করা হয় এবং তার সাথে আমাদের যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়।
আদালত তখন বলেন, মঙ্গলবার এ কথা আমাদের জানননি কেন। তাজুল ইসলাম তখন বলেন, যাকে আমরা ফটোকপির জন্য পাঠাই তার সাথে যোগাযোগ করতে না পারার কারণে আমরা জানতে পারিনি কী হয়েছে। রাতে ফটোকপির দোকানে দিয়ে দোকান বন্ধ পাই। সারা রাত তার কোনো খোঁজ পাইনি। আজ (বুধবার) সকালে দোকান খোলার পর আমরা ফটোকপির দোকানে গিয়ে জানতে পারি মঙ্গলবার ফটোকপির সময় তাকে নিউমার্কেট পুলিশ ধরে নিয়ে গেছে কাগজপত্রসহ। এপর আমরা থানাই যোগাযোগ করি। থানা কর্তৃপক্ষকে জানাই যে, এগুলো আমাদের লিগ্যাল ডকুমেন্ট। ট্রাইব্যুনালের নির্দেশেই রাষ্ট্রপক্ষের প্রসিকিউশন এগুলো আমাদের দিয়েছে। এটা এখন আমাদের ডকুমেন্ট। আমাদের কাজের প্রয়োজনে এগুলো আমরা ফটোকপির জন্য নিলক্ষেতে পাঠিয়েছি। এটা অবৈধ কোনো কিছু নয়। কিন্তু তারপরও থানা কর্তৃপক্ষ আমাদের ডকুমেন্ট ফেরত দিতে অস্বীকার করে। আটককৃত ব্যক্তিকেও তারা ছাড়েনি। তারা বলেছে ট্রাইব্যুনালের নির্দেশ ছাড়া এগুলো তারা ফেরত দেবে না।
নীলক্ষেতে ফটোকপি করতে পাঠানো বিষয়ে তাজুল ইসলাম আদালতকে জানান, আমাদের একটি ফটোকপি মেশিন রয়েছে। কিন্তু আমাদের যে কাগজপত্র দেয়া হয়েছে তা ৩০ হাজার কপির মত। এখান থেকে কয়েক সেট বানাতে হলে লক্ষাধিক কপি ফটোকপির দরকার হয়। আমাদের নিজস্ব যে ফটোকপি মেশিন রয়েছে তাতে অল্প সময়ে এত বেশি ফটোকপি করা সম্ভব নয়। সে কারণে আমরা নীলক্ষেতে পাঠাই।
এ ঘটনা শোনার পর আদালত তাজুল ইসলামকে বলেন, আপনি এখনই বিষয়টি লিখিত আকারে আমাদেরকে জানান। আমরা পদক্ষেপ নিচ্ছি। আদালত বলেন, এভাবে এসব ডকুমেন্ট পাবলিক প্লেসে ফটোকপি না করাই ভালো।
এ পর্যায়ে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী জেয়াদ আল মালুম আদালতকে পরামর্শ দিয়ে বলেন, আটককৃত ব্যক্তি ও জব্দকৃত মালামাল প্রথমে ট্র্রাইব্যুনালে জমা দেয়ার নির্দেশ দেয়া হোক। তারপর সেগুলো দেখে তাদের ফেরত দেয়ার ব্যবস্থা করা হোক।
তখন ট্রাইব্যুনাল নিউ মার্কেট থানার ওসিকে একটার মধ্যে (বুধবার) আটককৃত ব্যক্তি (এস এম জোবায়ের আলম) এবং জব্দকৃত ডকুমেন্টসহ আদালতে হাজির হতে নির্দেশ দেন। লিখিত নির্দেশ পেয়ে নিউ মার্কেট থানার ওসি মোস্তাফিজুর রহমান সাড়ে বারটার দিকে ট্রাইব্যুনালে হাজির হন। আদালত তার কাছে ঘটনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ট্রাইব্যুনাল থেকে তাদেরকে বলা হয়েছে নীলক্ষেতে যুদ্ধাপরাধবিষয়ক কাগজপত্র ফটোকপি করা হচ্ছে। এগুলো প্রসিকিউশনের ডকুমেন্ট। এগুলো ওখানে গেল কী করে। ওগুলো আপনারা আটকান। তখন আমরা এ পদক্ষেপ নেই।
আদালত তখন বলেন, আমরা তিনজন ট্রাইব্যুনালের বিচারপতি। আমরা তো কেউ এ কথা বলিনি।
ঘটনা জানার পর এবং জব্দকৃত কাগজপত্র দেখে আদালত তখনই তা আসামি পক্ষের আইনজীবীদের ফেরত দেয়া এবং আটক এস এম জোবায়ের আলমকেও ছেড়ে দেয়ার আদেশ দেন। এরপর আদালত কক্ষেই এ আদেশ বাস্তবায়ন করা হয়।
আসামি পক্ষের আইনজীবী তাজুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, পুলিশ বলেছে ট্রাইব্যুনালের বরাদ দিয়ে কেউ তাদের ফোন করেছে। আর ট্রাইব্যুনাল বলেছেন তারা এ জাতীয় কোনো আদেশ দেননি। তাহলে ট্রাইব্যুনালের নাম ব্যবহার করে কারা এবং কাদের প্ররোচনায় এ কাজ করেছে তা চিহ্নিত করা দরকার। এটি স্বাধীন বিচার ব্যবস্থার জন্য কলঙ্কজনক। একটা বৈধ ডকুমেন্ট ফটোকপি করতেও যদি আসামি পক্ষকে এভাবে হয়রানি করা হয় তাহলে আমরা যাব কোথায়? তিনি বলেন, পেছন থেকে একটি মহল জেনেশুনে কলকাঠি নাড়ছে। ন্যায়বিচার প্রাপ্তি থেকে আমাদের বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা করছে।

http://www.dailynayadiganta.com/details/23575