Abdur Razzaq On this news
নিজামিদের অবস্থা জানতে চেয়ে সরকারকে জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশনের চিঠি
শাহজাহান আকন্দ শুভ, কবির আহমেদ খান: জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামী, সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদসহ ৬ শীর্ষ যুদ্ধাপরাধীর আটকের কারণ, আইনের ভিত্তি জানতে চেয়েছে জাতিসংঘ মানবাধিকার হাইকমিশন। আটক এসব নেতাদের আইনজীবীদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সুনির্দিষ্টভাবে ৩৫টি দফার সুস্পষ্ট জবাব চেয়ে সরকারের কাছে চিঠি দিয়েছে কমিশন। জেনেভায় বাংলাদেশের স্থায়ী মিশন প্রধানের মাধ্যমে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে গত ১২ সেপ্টেম্বর এই চিঠি পাঠানো হয়। যুদ্ধাপরাধের তদন্ত সংস্থা আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ও পুলিশের মহাপরিদর্শকের কাছে এর জবাব তৈরি করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রেরণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশন ষাট দিনের মধ্যে ৩৫ দফা জবাব পাঠানোর কথা উল্লেখ করলেও তা সম্ভব হয়নি। ইতোমধ্যে সরকার এর সময়সীমা আরও এক মাস বাড়িয়ে নিয়েছে বলে জানা গেছে। জাতিসংঘের মানবাধিকার হাইকমিশনারের কার্যালয় থেকে ‘ওয়ার্কিং গ্র“প অন আরবিট্রেরি ডিটেনশন’ এর নামে প্রেরিত চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে- জামায়াত নেতা মতিউর রহমান নিজামী, আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী, কামারুজ্জামান, আব্দুল কাদের মোল্লা এবং বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর আটকের বিষয়ে তাদের আইনজীবীরা আবেদন করেছেন। বিচারের নামে আটক রেখে রিমান্ডে নেওয়া, বিচারের আগেই দোষী হিসেবে চিহ্নিত করা, জামিন না দেওয়াসহ বিভিন্ন বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে আবেদনে। এসব বিষয়ে হাইকমিশনের ‘ওয়ার্কিং গ্র“প অন আরবিট্রেরি ডিটেনশন’ বাংলাদেশের জবাব জানতে চেয়েছে। জাতিসংঘ মানবাধিকার সংক্রান্ত হাইকমিশন কার্যালয়ের চিঠি পাওয়ার কথা নিশ্চিত করেছেন তদন্ত সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সমন্বয়ক মোহাম্মদ আব্দুল হাননান খান (পিপিএম)। তিনি আমাদের সময়কে বলেন, এ বিষয়ে তারা এখনও জবাব দেননি। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে এ ব্যাপারে যোগাযোগ রাখছেন। তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে পুলিশ কনসার্ন। তারা জবাব দিচ্ছে।’
জাতিসংঘের মানবাধিকার সংক্রান্ত হাইকমিশনারের অফিস থেকে বলা হয়েছে, মতিউর রহমান নিজামী, আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী, কামারুজ্জামান, আব্দুল কাদের মোল্লা এবং বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে অবৈধভাবে আটক রাখা হয়েছে বলে তাদের কাছে লিখিত অভিযোগ জমা হয়। ওই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকমিশনের একটি ওয়ার্কিং গ্র“প এ বিষয় তদন্ত করে দেখছে। অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে, বাংলাদেশে ওই ৬ বিএনপি-জামায়াত নেতার স্বাধীনতা হরণ করা হয়েছে।
চিঠিতে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, জাতিসংঘের মানবাধিকার সনদে যে ন্যায় বিচার এবং বিচার ব্যবস্থার অধিকার থাকার কথা উল্লেখ আছে, সেই সনদের শর্ত ভঙ্গ করা হয়েছে তাদের আটক রেখে। কী কারণে এবং কোন আইনের ওপর ভিত্তি করে তাদের আটক করা হয়েছে তার আইনি ব্যাখ্যা সম্পর্কেও জানতে চেয়েছে জাতিসংঘ মানবাধিকার সংক্রান্ত হাইকমিশনার।
চিঠিতে আরও উল্লেখ করা হয়েছে-যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে আটক উল্লিখিত সবাই বার বার জামিনের জন্য আবেদন জানিয়েছেন। তাতে বলা হয়েছে-জামিন পেলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া তারা কোথাও যাবেন না। বিচারে কোনও হস্তক্ষেপ করবেন না। জামিনের জন্য তারা অর্থ জামানত রাখার কথাও বলেছেন। এরপরও জামিন হয়নি। আইন প্রতিমন্ত্রী গণমাধ্যমে বলেছেন-যুদ্ধাপরাধীদের কোনও জামিনের সুযোগ নেই। এসব বিষয়ে মানবাধিকার কমিশনের কাছে উদ্বেগ প্রকাশ করে আবেদনকারী বলেছে-ট্রাইবুনাল তদন্ত সম্পূর্ণ না করেই তাদের আটক রাখছে। এমনকী তাদের আইনজীবীদের কোনও তথ্য দিচ্ছে না ট্রাইবুনাল।
জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার কার্যালয়ের ‘ওয়ার্কিং গ্র“প অন আরবিট্রেরি ডিটেনশন’ এর প্রধান রেপোরটিয়ার এল হাডযি মালিক সো জেনেভায় অবস্থিত বাংলাদেশের স্থায়ী মিশনের প্রতিনিধি মো. আব্দুল হান্নানের কাছে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিয়ে করা অভিযোগের জবাব চেয়ে চিঠিটি দেন। ওই চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছেÑ সর্বোচ্চ ৬০ দিনের মধ্যে সংস্থাটি অভিযোগের বিষয়ে বাংলাদেশের কাছে বিস্তারিত তথ্য জানতে চায়। তবে বাংলাদেশ সরকার যদি প্রয়োজন মনে করে সেক্ষেত্রে ওয়ার্কিং গ্র“পকে জানিয়ে এক মাস সময় বাড়িয়ে নিতে পারে। এরপরও জবাব না দিলে মানবাধিকার কমিশনের ওয়ার্কিং গ্র“প তাদের কাছে থাকা তথ্যের ভিত্তিতে মতামত বা বক্তব্য জানিয়ে দেবে।
ইতোমধ্যে মানবাধিকার কমিশনের দেওয়া ৬০ দিন অনেক আগেই পেরিয়ে গেছে। তবে জবাব দিতে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে সময় বাড়িয়ে নেওয়া হয়। জানা যায়, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য তদন্ত সংস্থা আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল জবাব লিখছে।
জানা যায়, গত বছরের পহেলা ডিসেম্বর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে উল্লিখিত ৩৫টি দফার বিষয়বস্তু তদন্ত সংস্থা ‘আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালে’র সমন্বয়ক ও পুলিশের মহাপরিদর্শকের কাছে দফাওয়ারী জবাব দেওয়ার জন্য প্রেরণ করা হয়। ৪ ডিসেম্বর পুলিশ সদর দফতর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের চিঠি পেয়েছে বলে জানা যায়।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে গত ২৫ অক্টোবর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ে এ সংক্রান্ত চিঠি পাঠানো হয়। ২৬ অক্টোবর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় তা গ্রহণ করে।
চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, মতিউর রহমান নিজামী ২০১০ সালের ২৯ জুন আটক হন। পল্টন থানার ৫টি মামলায় ৩০ জুন সিএমএম কোর্ট তাকে ১৬ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে। ২৬ জুলাই কদমতলী থানার আরেক মামলায় তাকে ৩ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়। এ সময় তার সঙ্গে আইনজীবী ও আত্মীয়-স্বজনের দেখা করতে দেওয়া হয়নি। আটক থাকা অবস্থায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালের প্রধানের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২২ জুলাই তাকে সন্দেহভাজন যুদ্ধাপরাধী হিসেবে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। ২৯ ও ৩০ নবেম্বর পল্টন, রমনা ও কদমতলী থানার সব কটি মামলা থেকে অব্যাহতি পান। মতিহার থানা, কেরানীগঞ্জ থানা ও পল্লবী থানার মামলাগুলো ঝুঁলে আছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালের কারণে নিজামী ওই দুটি মামলার সার্টিফাইড কপি সংগ্রহ করতে পারছে না বলে অভিযোগ করা হয়েছে।
জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল কাদের মোল্লা ২০১০ সালের ১৩ জুলাই গ্রেপ্তার হন। ২২ জুলাই তাকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল আটক দেখায়। সব মামলা থেকে কাদের মোল্লা মুক্তি পেলেও কেরানীগঞ্জ ও পল্লবী থানার দুটি সাধারণ মামলায় তাকে আটক রাখা হয়েছে। জামায়াতের আরেক সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মোহাম্মদ কামারুজ্জামান আটক হন ২০১০ সালের ১৩ জুলাই। জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদ ও নায়েব-ই-আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী গ্রেপ্তার হন ২০১০ সালের ২৯ জুন। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী আটক হন ২০১০ সালের ১৬ ডিসেম্বর। আটক অবস্থায় পরবর্তী সময়ে উল্লিখিত সবাইকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল সন্দেহভাজন যুদ্ধাপরাধী হিসেবে গ্রেপ্তার দেখায়।
http://www.amadershomoy.net/content/2012/01/15/news0383.php
No comments:
Post a Comment