Wednesday, December 14, 2011

যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধাপরাধ বিষয়ক রাষ্ট্রদূত স্টিফেন জে. র‌্যাপের বক্তব্য

প্রেস কনফারেন্স

ঢাকা রিপোর্টার্স’ ইউনিটি

২৮শে নভেম্বর, ২০১১





ঢাকা, ২৮শে নভেম্বর – সফররত যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধাপরাধ বিষয়ক রাষ্ট্রদূত স্টিফেন জে র‌্যাপ আজ, সোমবার, ২৮শে নভেম্বর ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে নিম্মোক্ত বক্তব্য প্রদান করেন।

(বক্তৃতা শুর”)

আপনাদের আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল সম্পর্কে জানতে এবং যে বিচারকাজ শুর” হয়েছে তার নিরপেক্ষতা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে করণীয় বিষয়ে মতামত জানাতে বাংলাদেশে এটি এ বছরে আমার ত”তীয় সফর।

১৯৭১ সালে কী ধরনের জঘন্য অপরাধ এখানে সংঘটিত হয়েছিল সে বিষয়ে আমার ধারণা রয়েছে। আমি জানি সে সময় হাজার হাজার ভুক্তভোগীকে হত্যা করা হয়েছে কিংবা তারা ধর্ষিত হয়েছেন, কী যন্ত্রণার ভিতর দিয়ে তারা দিনাতিপাত করেছেন এবং কত বাড়িঘর ও সম্পত্তি ধ্বংস হয়েছে। এ ধরনের অপরাধের ভুক্তভোগীদের বিচার পাওয়ার অধিকার রয়েছে এবং যারা এ ধরনের অপরাধের জন্য অভিযুক্ত হয়েছেন তাদেরও অধিকার রয়েছে তাদের বির”দ্ধে প্রমাণাদির যথার্থতা যাচাই করার এবং নিজেদের পক্ষে সাক্ষ্য-প্রমাণ হাজির করবার। যারা নির্দোষ, এ প্রক্রিয়ায় তাদের নিরাপরাধতা প্রমাণিত হওয়া উচিত এবং তাদেরকে মুক্তি দেয়া উচিত। আর যারা এ ধরনের অপরাধের জন্য দায়ী তাদেরকে দোষী সাব্যস্ত করে শাস্তি প্রদান করা উচিৎ। বাংলাদেশে, এ অঞ্চল এবং বিশ্বব্যাপী এই বিচারের ঐতিহাসিক গুর”ত্ব বিবেচনায়, এমনভাবে এই বিচারকার্য পরিচালনা করা উচিত যাতে তা স্বচ্ছ হয় এবং সবার জন্য উন্মুক্ত থাকে।

এই বিচার প্রক্রিয়ার নিরপেক্ষতা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে গত মার্চ মাসে আমি এই বিচারকাজের ধারাসমূহের সংশোধনীর জন্য কিছু প্রস্তাব রেখেছিলাম। এসব প্রস্তাবনার কিছু জুন মাসে গ”হীত সংশোধনীতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। তবে আমি দুঃখের সাথে বলতে চাই যে এগুলোর মধ্য থেকে আরো অনেকগুলো বিষয় যোগ করা সম্ভব ছিল।

গত সপ্তাহে বিচার প্রক্রিয়ার প্রারম্ভিক বক্তব্যের মাধ্যমে এখন প্রথম বিচার কাজ শুর” হয়েছে এবং আগামী ৭ই ডিসেম্বর থেকে এর সাক্ষ্য গ্রহণ শুর” হবে।

আমার বর্তমান সফরের মূল উদ্দেশ্য হলো আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ ট্রাইবুনাল কিভাবে এই বিচারকাজ পরিচালনা করবে তা জানা। সংবিধি ও ধারাগুলো তৈরী করা আছে; এখন প্রশ্ন হচ্ছে কীভাবে ওগুলো বাস্তবে প্রয়োগ করা হবে। এই ঐতিহাসিক বিচার প্রক্রিয়ার জন্য ন্যায় বিচার নিশ্চিত করা এবং তা করতে দেখার এখনো অনেক কিছুই করার বাকি রয়েছে।

প্রথমত, এটা গুর”ত্বপূর্ণ যে বিচারকদের প্রথম সুযোগেই “মানবতার বির”দ্ধে অপরাধ” বিষয়টি সংজ্ঞায়িত করা উচিত। “মানবতার বির”দ্ধে অপরাধ” — বিষয়টি আন্তর্জাতিক আদালতের সংবিধি ও বিভিন্ন মামলার মাধ্যমে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে। কিন্থ বাংলাদেশে এ বিষয়টি এখনো কোনো সংজ্ঞায় ফেলা হয়নি। প্রথম মামলার অভিযোগ গঠন প্রক্রিয়ায় বিচারকরা বলেছিলেন যে তারা বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী এই সংবিধি প্রয়োগ করবেন এবং আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালের বিভিন্ন সিদ্ধান্তের মধ্য দিয়ে তারা দিক নির্দেশনা খোঁজার চেষ্টা করবেন। তবে, অভিযুক্ত হত্যা ও ধর্ষণগুলো কি একটি নাগরিক গোষ্ঠীর বিস্তৃত ও প্রক্রিয়াগত আক্রমণের অংশ হিসেবে করা হয়েছিলো, নাকি সেগুলো কোনো বর্ণবাদ, ধর্মবাদ কিংবা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যের কারণে করা হয়েছিলো নাকি আবার অভিযুক্ত আসামীদের এই বিশাল আক্রমণ সম্বন্ধে কোনো তথ্য বা জ্ঞান থাকার প্রয়োজন ছিলো কি না, এগুলোর মধ্যে কোন বিষয়টি বিচার প্রক্রিয়ায় প্রমাণ করতে হবে সে বিষয়টিও পরিষ্কার নয়। সংঘটিত অপরাধ সংশ্লিষ্ট যেসব বিষয়গুলো প্রমাণ করতে হবে সেগুলো অন্যান্য আদালতে বিচারকরা পূর্ববর্তী রায়ের মাধ্যমে নির্ধারণ করেছেন। এখানেও একইভাবে কাজটি করা যেতে পারে।

দ্বিতীয়ত, অন্যান্য মারাত্মক অপরাধে আরোপিত বাংলাদেশী নাগরিকগণ যেসব অধিকার নিশ্চিতভাবে উপভোগ করবে, এই অভিযুক্তদেরও সেই অধিকারগুলো চর্চার সুযোগ দেয়াটা গুর”ত্বপূর্ণ। বাংলাদেশের সংবিধান ও আইন এ বিষয়ে সম্মতি জানায় যে এটা একটি বিশেষ আদালত যা নিজস্ব ধারা ও প্রক্রিয়াসমূহের জন্য নিজেই দায়ী। বিচারকরা ধারাগুলোর সংস্কার করে ‘অভিযুক্তদের দোষী সাব্যস্ত হওয়ার আগে নির্দোষ হিসেবে বিবেচিত হওয়া‘ এবং ‘যুক্তিসঙ্গত দ্বিধা-সন্দেহের উর্ধ্বে প্রমাণ’ ধারণাগুলো সংযোজন করেছেন। একইসঙ্গে, এই বিচারকাজ যেন এমনভাবে পরিচালিত হয় যাতে অভিযুক্তরা তাদের আইনজীবীদের সঙ্গে পরামর্শ করার সমঅধিকার, নিজের রক্ষার্থে মামলা প্রস্থতির জন্য সমপরিমাণ সময় ও দক্ষতা এবং অন্যান্য মামলার ক্ষেত্রে যেমন হতো ঠিক তেমনিভাবে এই প্রক্রিয়াকেও চ্যালেঞ্জ করার মতো সময় ও দক্ষতা উপভোগ ও ব্যবহারের সুযোগ পায় সে বিষয়টাও নিশ্চিত করাটা গুর”ত্বপূর্ণ।

তৃতীয়ত, ধারাসমূহ সংস্কারের মাধ্যমে সাক্ষীদের নিরাপত্তার সুযোগ হলেও এটা গুর”ত্বপূর্ণ যে এমন একটি সাক্ষী নিরাপত্তা প্রক্রিয়া গড়ে তুলতে হবে যা উভয়পক্ষ ব্যবহারের সুযোগ পায়। প্রথম বিচার প্রক্রিয়ায় সাক্ষীদের নামের তালিকা ইতিমধ্যে লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। বিবাদীকেও ৭ই ডিসেম্বরের মধ্যে সাক্ষীদের একটি তালিকা অবশ্যই জমা দিতে হবে। সাক্ষী নিরাপত্তা ব্যবস্থায় গ”হীত পদক্ষেপগুলো এমনভাবে কার্যকর করতে হবে যাতে যারা এগিয়ে এসে সত্য কথা বলতে চায় তারা যেন কোনো হুমকি ও ভয়-ভীতির শিকার না হয়।

সর্বশেষ এবং সবচাইতে গুর”ত্বপূর্ণ যে বিষয় তা হলো — এই বিচার প্রক্রিয়ায় কি ঘটছে তা সবাইকে জানাতে হবে। সাধারণ জনগণের পক্ষে এই আদালতের অধিবেশনে যোগ দেয়া সহজ ও সম্ভব নয়। আদর্শতগভাবে, সবচাইতে ভালো হতো যদি এই বিচার প্রক্রিয়ার অধিবেশনসমূহ টেলিভিশন বা রেডিও-তে সরাসরি সম্প্রচার করা হতো। অথবা সপ্তাহিক প্রতিবেদন প্রচার করা হতো যেখানে মূল সাক্ষ্য, যুক্ততর্ক, এবং র”লিং দেখানো হতো। ১৯৭০-এর দশকে ক্যাম্বোডিয়ায় যুদ্ধ চলাকালে সংঘটিত নিষ্ঠুরতার জন্য যারা দায়ী বলে যারা অভিযুক্ত হয়েছেন, বর্তমানে সে দেশটিতে যুদ্ধাপরাধী বিচারকাজে এই প্রক্রিয়া অবলম্বন করা হচ্ছে। বাংলাদেশে যদি তা সম্ভব না হয়, তাহলে নিরপেক্ষ পর্যবেক্ষকদেরকে এই বিচার প্রক্রিয়া অনুসরণ করার অনুমোদন দেয়া উচিত যাতে করে তারা প্রাত্যহিক ও সাপ্তাহিক প্রতিবেদন তৈরি করতে পারেন যা ইন্টারনেট ও অন্যান্য সংবাদ মাধ্যম দ্বারা সবার কাছে পৌঁছাতে পারে।

এই ন”শংস অপরাধের যারা শিকার হয়েছিলেন, তাদের কাছে এই বিচার প্রক্রিয়া অত্যন্ত গুর”ত্বপূর্ণ। এইখানে যা ঘটবে, বিশ্বের সর্বত্র যারা এধরনের অপরাধের সাথে জড়িত তাদের জন্য এটি এই বার্তা পৌঁছে দেবে যে এধরনের অপরাধের জন্য যারা দায়ী — একটি রাষ্ট্র ব্যবস্থার পক্ষে সম্ভব তাদের বিচারের ব্যবস্থা করা।

আমি এখানে এসেছি কারণ যুক্তরাষ্ট্রের জনগণ এটা নিশ্চিত করতে চায় যে এই বিচার প্রক্রিয়াটি স্বচ্ছ ও নিশ্চিত হচ্ছে। এই ঐতিহাসিক বিচার প্রক্রিয়া ন্যায় বিচার অর্জনের জন্য এই প্রক্রিয়া সঙ্গে যারা জড়িত তাদের সকলের সাথেই আমরা কাজ করা অব্যাহত রাখবো।

==================





* বক্তৃতার জন্য প্রস্থতকৃত







জিআর/২০১১

No comments:

Post a Comment